bengali, fiction, science fiction

চিরযৌবন সুরা

পরিতোষ মন্ডল, বয়স ছাব্বিশ, মাঝারি গঠন, রং শ্যামলা।
—–
পরিতোষ একটা বহুরাষ্ট্রীয় প্রসাধনী নির্মাতা কোম্পানির সেলস এজেন্ট। দক্ষিণ কলকাতা আর দক্ষিণ ২৪ পরগনার কিছুটা জায়গা জুড়ে ওকে কাজ করতে হয়। কোম্পানিতে ওর বেশ খাতির আছে, কারন মাসের পর মাস পরিতোষ নিজের টার্গেট এচিভ করে।
এ মাসের টার্গেটটা অবশ্য একটু বেশিই, তবে তা নিয়ে পরিতোষের ভাবনা নেই। সে হিসেব করে দেখেছে, তার কোম্পানির সব দামি দামি প্রোডাক্টগুলোই শহর কলকাতার চেয়ে শহরতলী আর গ্রামের বাজারে বেশী বিক্রী হয়। কেন এমন হয়, এ নিয়ে অবশ্য তার কোন মাথা ব্যাথা নেই, ওর কাছে টার্গেট এচিভ করে কমিশন পকেটে পোরাটাই বেশি ইন্টারেস্টিং। তাই যখনই ওর টার্গেট পুরো করতে অসুবিধে হয়েছে, তখনই সে শহরতলী আর গ্রামের দোকানগুলোয় ছুটে গেছে।
শিয়ালদা থেকে সাতটা আটের ডায়মন্ড হার্বার লোকাল ধরে, পরিতোষ আজ হোটর এসেছে। বারুইপুরের দুটো স্টেশনের পরে। সকালে এখানে মার্কেট ভিজিট করে, বিকেলবেলাটা বারুইপুরে বাকি কাজ সেরে নেবে।
হোটর স্টেশনটা বেশী বড় নয়। মাত্র দু’খানা প্লাটফর্ম। আপ লাইনের বাঁ দিকটায় প্রায় পুরোটাই মাছের ভেরি আর ডানদিকে লাইন বরাবর বাজার। আজ গরমটাও চরম পড়েছে। সকাল সাড়ে আটটাতেই মনে হচ্ছে গা পুড়ে যাবে। ট্রেন থেকে নেমে ডাউন প্লাটফর্মের ধারে একটা চায়ের দোকানে বসে চা আর পাউরুটি-মামলেট খেতে খেতে পরিতোষ তার কাজের ফর্মুলাটা ছকে নিতে থাকে। হোটরে গোটা ছয়েক প্রসাধনী দোকান আর সতেরোটা জেনেরাল স্টোরস আছে, পরিতোষ প্রথমে জেনারেল স্টোরস গুলো থেকে টুকটাক যা অর্ডার পাওয়া যায় নিয়ে তারপর প্রসাধনী দোকান গুলোয় যাবে। ওখানেই বড় বড় অর্ডার পাওয়া যাবে। তবে ওদের অনেক বায়নাক্কা। এই রেটে চাইনা, ডাউন রেটে মাল ঢুকছে, পার্টি ডিস্কাউন্ট মারছে। এই সব নাখড়া পরিতোষকে হাসি মুখে সহ্য করতে হবে, আর মাথায় অঙ্ক কষে রেট ঠিক করে তাকে অর্ডারটা নিতেই হবে। পরিতোষ জানে, এ কাজে সে এখন তুখোড় হয়ে গেছে।
চা জলখাবারের দাম মিটিয়ে নিজের ভিজিটিং ব্যাগটা কাঁধে তুলে পরিতোষ বাজারে ঢোকে। পরপর দুটো দোকানে ভিজিট করে তেমন অর্ডার পাওয়া গেলনা। পরিতোষ জানে, এখন দমলে চলবে না। বাকি দোকানগুলো থেকে ওকে অর্ডার তুলতেই হবে। কি করে সেই অর্ডার তুলবে, এইসব ভাবতে ভাবতেই বাজারের ভেতর দিকে এগোচ্ছিল, হঠাৎ একটা দোকানের সাইনবোর্ডে তার চোখ পড়ল। পুরোনো, ধুলোয় ঢাকা একটা সাইনবোর্ড, শুধু দোকানের নামটা কে যেন সদ্য মুছে পরিষ্কার করে দিয়েছে।
পরিতোষ দাঁড়িয়ে পড়ে। ধুলোর স্তরের পেছনে হলুদ রঙের বোর্ডে নীল রঙে লেখা আছে-
ঘরুই প্রসাধনী ভান্ডার।
প্রো:- সুকুমার ঘরুই।
(বি৹দ্র৹:- এখানে চিরযৌবন ধরে রাখার মহৌষধ পাওয়া যায়।)
এই দোকানটা এখানে ছিল অথচ আগে কোনদিন সেটা খেয়াল করেনি!? পরিতোষ একটু অবাক হয়; এই ভুল হল কি করে? হয়ত সাইনবোর্ড ধুলোয় ঢাকা থাকায় চোখ এড়িয়ে গেছে। পরিতোষ খেয়াল করে, দোকানটার সামনে চৌক-চৌক ঘষা কাঁচ বসানো দরজা। পরিতোষ মনে মনে ভাবল, এ বাজারের সঙ্গে দোকানের দরজাটা বেমানান হলেও, দোকানমালিকের শখ আছে। দু একটা কাঁচ বোধহয় ভেঙে গেছিল, সেগুলোর জায়গায় পরে নীল আর লাল রঙের দু একটা কাঁচ লাগানো আছে। যাক, আজ যখন জানা গেল, একবার ভেতরে যেতেই হবে। এই ভেবে পরিতোষ দরজা ঠেলে ভেতরে পা বাড়ায়।
 
দোকানের ভেতরে ঢুকে পরিতোষ একটু দমে গেল। বাইরে থেকে বোঝা না গেলেও, এটা একটু পুরোন ধরনের দোকান। দেয়াল জুড়ে কাঁচের আলমারী থাকলেও সেটা খালি। তবে পুরোপুরি খালি বলাও চলে না। কয়েকটা ময়লা, পুরোনো খালি শিশি-বোতল, ধুলোর আস্তরণ আর মাকড়সার জাল জড়িয়ে আছে সেই আলমারী গুলোর ভেতরে। পরিতোষ বুঝতে পারে, এখানে তার কিছুই লাভ হবে না।
দোকানটা থেকে বেরিয়ে আসার জন্যে যেই পরিতোষ পেছন ফিরতে যাবে, তক্ষুনি একটা গম্ভীর গলায় কেউ কথা বলে উঠল, “আরে ফিরে যাচ্ছেন কেন? ভেতরে আসুন।”
পরিতোষ চমকে উঠল। এতক্ষন সে খেয়াল করেনি, আলমারী গুলোর পেছনে যে চেম্বার করা আছে, সেখানে যে কেউ বসে আছেন, সেটা সে ঠাওর করতে পারেনি। পরিতোষ চেম্বারের দিকে এগিয়ে যায়।
একটা সবুজ রঙের ময়লা পর্দা সরিয়ে পরিতোষ চেম্বারটায় ঢোকে। ঢুকেই তার চোখ যায় সামনে একটা পুরোনো আমলের কাঠের টেবিলে। তার ওপর অনেক পুরোনো কাগজ আর বই সাজানো আছে। একটা টেবিল ল্যাম্পও আছে, যেটা বোধহয় অনেক পুরোনো। সেই টেবিল ল্যাম্পের আলোয় দেখা যাচ্ছে, টেবিলের ওপর অনেক গুলো কাঠের বাক্স। তার মধ্যে দুয়েকটার ঢাকনা খোলা, আর সেখানে পুরোনো দিনের ইত্ৰ-সেন্ট রাখার জন্যে যেমন কাঁচের শিশি থাকত, সেগুলোই সাজানো আছে। টেবিলের ডান পাশে একটা কাঠের গদিওয়ালা চেয়ার রাখা, যদিও গদির রংটা বোঝা মুশকিল। টেবিলের ওপারে একজন পুরুষ বসে আছেন, যদিও টেবিল ল্যাম্পের আলোয় তাকে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে না। গোটা চেম্বারটায় একটা অদ্ভুত সুগন্ধ নাকে আসছে, সেই গন্ধে ক্লান্তি দূর হয়ে যাচ্ছে। বাইরে চাঁদি ফাটা গরম হলেও এই চেম্বারটায় বেশ ঠান্ডা লাগছে। মনে হচ্ছে একটা এসি মেশিন বসানো আছে, কিন্তু সেটা কোথায়, তা দেখা যাচ্ছে না। পরিতোষের বেশ ভালই লাগছে। সে মনে মনে ভাবল, এখানে কোন অর্ডার না পেলেও, কিছুক্ষন আরাম করা যাবে।
“বসুন।” লোকটা পাশের গদিওয়ালা কাঠের চেয়ারের দিকে আঙ্গুল দিয়ে ইশারা করল।
পরিতোষ লক্ষ্য করল, সেই আঙুলে একটা আংটি, যার ওপর একটা বড় সবুজ পাথর বসানো। সে চেয়ারটায় বসে পড়ল। এবার লোকটার চেহারা দেখা যাচ্ছে। লোকটার বয়েস প্রায় পঁয়তাল্লিশের কাছাকাছি মনে হয়, বেশিও হতে পারে। সবুজ কাপড়ের ওপর সোনালী জড়ির কাজ করা বেশ জমকালো একটা রাজকীয় পোশাক আর মাথায় পাগড়ি পরে বসে আছে। একঝলকে ইতিহাসের পাতা থেকে উঠে আসা, কোন দেশের রাজা বলে মনে হয়। পরিতোষ লক্ষ্য করে, লোকটার দশ আঙুলেই আংটি, আর তার সব কটায় বেশ বড় আর দামি রত্ন পাথর বসানো আছে। পরিতোষ হিসেব করে, আর যাই হোক, লোকটার কাছে প্রচুর টাকাপয়সা আছে। একে একবার মুরগি করলেই, ভালো অর্ডার পাওয়া যাবে।
“বলুন। কি বলতে এসেছেন।”
লোকটার কথায় পরিতোষের চিন্তা বাধা পায়। সে গলাটা ঝেড়ে, কিছু একটা বলতে চায়, কিন্তু গলা থেকে শব্দ বেরোয় না।
“আপনি সেলসম্যান তো?”
“ইঞা… হ্যাঁ। হ্যাঁ। আমি অমুক কোম্পানি থেকে আসছি।”
“বেশ। দেখি আপনার ক্যাটালগ দেখান।”
পরিতোষ মনে মনে ভাবে লোকটা তাহলে তার লাইনের ব্যাপারটা বোঝে। সে নিজের ভিজিটিং ব্যাগ থেকে পায়ের নখ থেকে মাথার চুল রং করার জন্যে, তার কোম্পানির সব প্রোডাক্ট আর মহিলা মডেলের হাসি হাসি মুখ ছাপানো ক্যাটালগগুলো বের করে লোকটার সামনে রাখে। সে কিছু বলতে যাওয়ার আগেই, লোকটা হাত তুলে তাকে থামতে বলে, তারপর সামনে নুয়ে পরে ক্যাটালগ গুলোর পাতা উল্টে দেখতে থাকে।
“আমি তোমার সব প্রোডাক্টগুলোই অর্ডার দিয়ে দেব। তবে চিরযৌবন ধরে রাখার মত কিছু নেই তোমার কোম্পানি তে?” কিছুক্ষণ পরে লোকটা নিজেই বলে ওঠে।
পরিতোষ মনে মনে খুশি হয়, তবু মুখে একটা সাধারণ হাসি ধরে রেখে বলে, “ঠিক আছে, কোনটা কোনটা, কতগুলো করে পাঠাতে হবে বলুন, আমি লিখে নিচ্ছি।”
“হ্যাঁ, সে আমি বলছি। কিন্তু তার আগে বল, মানুষের যৌবন ধরে রাখার মত কিছু কি তোমাদের কোম্পানি তৈরি করে, যাতে মানুষের বয়স বাড়ে না।”
“যাঃ। এমন কিছু হয় নাকি? এমন কিছু হলে, পৃথিবীতে মারমার কাটকাট হয়ে যেত।” পরিতোষ হেসে উঠলো।
“আমার কাছে আছে সেই জিনিষ।” লোকটা গম্ভীর ভাবে বলে।
“আপনার কাছে আছে? তাহলে সেটা আপনি কোন বড় কোম্পানিকে দিয়ে দিচ্ছেন না কেন? অনেক টাকা পাবেন।” পরিতোষের কথায় ব্যঙ্গ ফুটে ওঠে।
“আমার বয়স কত বলে মনে হয় তোমার?” লোকটার গলায় আরও গাম্ভীর্য খেলা করে।
“কত!? পয়তাল্লিশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে।”
“ভুল। একশ সাতাশ বছর।”
“একশ সাতাশ!?? আপনি ইয়ার্কি করছেন?”
“নাঃ। তুমি মহারাজা ভুপিন্দ্র সিং এর নাম শুনেছো?”
“না, আমি এই নাম শুনিনি।”
“স্বাভাবিক। তোমার কাছে এটাই আশা করেছিলাম। মহারাজা ভুপিন্দ্র সিং, পাতিয়ালার মহারাজা ছিলেন। তোমাদের এখন গুগুল আছে, খুঁজে দেখো অনেক কিছু জানতে পারবে।”
পরিতোষ মনে মনে হাসল, তুমি মাল গুগুল দেখাচ্ছ, আর বয়স বলছ একশ সাতাশ। সং সেজে আমাকে বোকা বানানোর মতলব।
“ঠিক আছে, সে না হয় সার্চ করে নেব। এখন বলুন কি কি অর্ডার দেবেন। আমায় আরও অনেক জায়গায় যেতে হবে।”
“সে তুমি পাবে। তার আগে তোমায় আমি আমার তৈরি চিরযৌবন সুরা দেখাতে চাই। নইলে তোমার বিশ্বাস হবে না।”
পরিতোষ বিরক্ত হলেও, অর্ডার পাওয়ার আশায় মুখে কিছু বলতে পারল না। সে নিজেকে বোঝায় অর্ডার নিতে গেলে এই ভাট তাকে আজ শুনতেই হবে।
“মহারাজা ভুপিন্দ্র সিং প্রথম ভারতীয় যিনি প্রাইভেট এরোপ্লেন কেনেন। ওনার কাছে প্রায় তিরিশ খানা রোলস রয়েস ছিল। নিজে পাঁচ খানা বিয়ে করে অষ্টআশি খানা ছেলেপিলে পয়দা করেছিলেন। এছাড়া ওনার প্রাইভেট হেরেমে যারা ছিল, তাদের থেকে ক’জন পয়দা হয়েছিল, তার হিসেব নেই।”
পরিতোষ কি বলবে ভেবে পায় না, তাই চুপ করেই থাকে।
লোকটা একটু থেমে আবার শুরু বলতে শুরু করে, “আমি আর মহারাজা ভুপিন্দ্র সমবয়সী ছিলাম। মহারাজার দরবারে শিক্ষা মন্ত্রী ছিলেন আমাদের এই বাংলার মানুষ; পন্ডিত মাখন লাল বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি আমাকে খুব স্নেহ করতেন। মহারাজার নেশা ছিল চিরযুবক হয়ে থাকার। সেই জন্যে তিনি জলের মত অর্থ ব্যয় করতেন। ইংল্যান্ড, ফ্রান্স, জার্মানি এই সব দেশ থেকে চিকিৎসা বিশারদদের নিজের রাজ্যে নিয়ে এসেছিলেন। তাদের জন্য টাকা খরচ করে ল্যাবরেটরি তৈরি করে দিয়েছিলেন, যাতে তাঁরা চির যৌবন ধরে রাখতে পারে এমন ওষুধ তৈরি করতে পারেন। সেই সময় মাখন লাল বাবু, মহারাজকে আমার কথা বলেন। আমি যে আয়ুর্বেদ চর্চা করি, সে কথাও জানান। মহারাজা আমাকে পাতিয়ালা ডেকে পাঠান এবং আয়ুর্বেদ মতে যৌবন ধরে রাখার জন্য ঔষধ তৈরি করতে নির্দেশ দেন।”
পরিতোষ হাঁ করে এই গাঁজাখুড়ি গপ্প শুনছিল। এই গপ্পো শুনতে তার বেশ মজাই লাগছিল। লোকটা এবার পরিতোষের কাছে মুখ এগিয়ে এনে, গলা নামিয়ে বলল, “মহারাজার ওই বিদেশী ডাক্তারের দল, সার্জারি করে ওঁর হেরেমের বাঁদীদের অক্ষতযোনী করতে সক্ষম ছিল, কিন্তু মহারাজা কে বুড়ো হওয়া থেকে আটকানো যাচ্ছিল না। তুমি উলঙ্গ রাজার গল্প শুনেছো তো, আমি দেখেছি। মহারাজ বছরে একদিন নিজের পুরুষাঙ্গে হীরের নেকলেস জড়িয়ে পরিষদদের সামনে আসতেন, নিজের পুরুষাঙ্গের ক্ষমতা জাহির করতে। ইতিহাসে এসব কথাকে মিথ্যে বলেই উড়িয়ে দেওয়া হয়, কিন্তু এসব আমার নিজের চোখে দেখা।”
লোকটা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল, “যাইহোক, আমি একদিন বুঝতে পারলাম, কি ভাবে মহারাজের যৌবন ধরে রাখতে পারবো। কিন্তু তার জন্যে আমাকে নিজের জীবনীরস মহারাজ কে দিয়ে দিতে হবে। এক কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থায় পরে গেলাম। নিজেকে কি করে শেষ করে দিই!? তারপর এক অদ্ভুত খেয়াল মাথায় এল। মহারাজা কে বললাম, আমি ওনার জন্য চিরযৌবন ধরে রাখার ওষুধ তৈরি করেছি। তিনি আমার কাছে চিকিৎসার জন্যে আসতে রাজি হলেন। আমি ওনার জীবনীরস নিজের ভেতর টেনে নিতে থাকলাম। দিন দিন মহারাজ জীবন সম্পর্কে বিমুখ হতে লাগলেন এবং একদিন একাকীত্বের ভারে মৃত্যু বরন করলেন। আমি কিন্তু আমার পয়তাল্লিশ বছর বয়েস ধরে রেখে এখানে পালিয়ে এলাম। তারপর একে একে অনেকের জীবনীরস শুষে নিয়ে আজও আমার বয়স ধরে রেখেছি।”
এবার পরিতোষের অস্বস্তি শুরু করতে লাগল। লোকটা যে বদ্ধ পাগল, সে বিষয়ে আর কোন সন্দেহ রইল না। এখানে অর্ডার যে পাওয়া যাবে না, মিছিমিছিই এখানে সময় নষ্ট হল বলে, নিজের ওপর রাগও হল।
পরিতোষ চেয়ার থেকে ওঠার চেষ্টা করল, কিন্তু তার হাত পা গুলো কেমন যেন অবশ হয়ে গেছে। চেম্বারটায় যে সুগন্ধটা পাচ্ছিল, সেটাকে এখন খুব চেনা চেনা মনে হতে লাগল। লোকটা এবার অদ্ভুত ভাবে হেসে উঠল।
“আমার যখনই জীবনীরস শেষ হয়ে আসে, আমার এই চেম্বার খুলে বসি। কেউ না কেউ ঠিক এসে পরে। আজ যেমন তুমি এসেছ। ব্যাস আর কিছুক্ষন, তারপর তুমি কিছুই বুঝতে পারবে না।”
youth
চোখটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে পরিতোষ দেখতে পেল, লোকটা নিজের পাগড়ি খুলে ফেলেছে। তার চুলের জটা সাপের মত তার দিকে এগিয়ে আসছে।
—–
সকাল সাতটা আটের ডায়মন্ড হার্বার লোকালের, জানলার ধারে একটা সিটে বসে, অনিরুদ্ধ আজকের খবরের কাগজটা খুলল। অনিরুদ্ধ একটা বেসরকারি ওষুধ প্রস্তুতকারী কোম্পানির মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ। তাকে এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে। আজ তার মগরাহাটে মার্কেট ভিজিট। হঠাৎ নিরুদ্দেশ কলামের একটা লেখা তার চোখে পড়ল-
“পরিতোষ মন্ডল, বয়স ছাব্বিশ, মাঝারি গঠন, রং শ্যামলা। গত ২৫শে মে থেকে নিখোঁজ।”

Leave a comment