bengali, fiction

চতুরঙ্গ

অনন্তলালের কথা

অনন্তলাল বসাকের এখন ঘুম খাওয়া সব উড়ে গেছে। কোম্পানীর চীফ সিইও প্রজাপতি বর্মন পেছনে তাড়া দিচ্ছেন। কাল বাদে পরশু নতুন প্রোডাক্ট-রেঞ্জ লঞ্চ হবে। অনন্তলালের দুই শাকরেদ প্রভাষ আর বিশু, দুজনে মিলে এই নতুন যন্ত্র গুলো তৈরি করেছে। এখন আর প্ৰিপ্রোগ্রামিং করে দিতে হবে না। একবার এই যন্ত্র চালু হলেই, এরা নিজে নিজেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করার মত সমর্থ হয়ে যাবে। এই প্রজেক্টটা চীফ সিইও প্রজাপতি বর্মনের জন্যে মর্যাদার লড়াই, তাই কোথাও কোনো খুঁত যেন না থাকে সেই দিকে খুব তটস্থ। যার জন্য তিনি অনন্তলালের ঘুম- খাওয়া সব কেড়ে নিয়েছেন। অনন্তলালও এই প্রজেক্টে কাজ করে খুব খুশী। সে ভাল ভাবেই জানে, এই প্রোডাক্ট-রেঞ্জ ইতিহাস তৈরি করবে। তবে একটা চিন্তা তার মনে কাঁটার মত খোঁচা দিচ্ছে।

প্রজাপতির কথা

এই কোম্পানি জয়েন করার সময় প্রজাপতির ইচ্ছে ছিল, যে সুযোগ পেলে এমন এটা স্বয়ং-সম্পূর্ণ অটোমেটিক যন্ত্র তৈরি করে, বাজারে ছাড়তে, যে নিজে নিজেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তবে অনন্তলাল আর তার দুই শাকরেদ যে এত ভালো কাজ করবে সেটা কে জানত। বাজারে যে যন্ত্রগুলো আছে, সে গুলো সব প্ৰিপ্রোগ্রামিংয়ের ওপর দিয়ে চলছে। মাঝে মাঝে বিগড়েও যাচ্ছে। প্রজাপতি জানেন, ওনার কোম্পানীতে তৈরি এই নতুন সয়ংসক্রিয় যন্ত্রগুলো ইতিহাস তৈরী করতে চলেছে। এই যন্ত্রগুলো বাজারের শ্রেষ্ঠতম যন্ত্র হতে চলেছে।

প্রভাষ আর বিশুর কথা

কথায় আছে ‘বাপ কা বেটা’। প্রভাষের ছেলে বিশু যে বাপের থেকেও গুণী হবে, এটা প্রভাষ নিজেও ভাবতে পারেননি। এই প্রজেক্টে প্রভাষ প্রায় গোটাটাই বিশুর ওপর নির্ভর করেছে। প্রজেক্ট ম্যানেজার অনন্তলাল যখন যেমন চেয়েছে, বিশু বুদ্ধি করে ঠিক সেই রকমই নকশা তৈরি করেছে। তারপর বাপ বেটায় মিলে যন্ত্র গুলোকে আদল দিয়ে তৈরি করেছে।

তবে এত ভাল ভাল কথার মধ্যে, বাপ আর বেটা, এই প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে, এক জায়গায়, একে অপরের কাছে, একটা করে তথ্য গোপন করেছে। সেটা অবশ্য প্রজেক্ট ম্যানেজার অনন্তলাল বসাক বা চীফ সিইও প্রজাপতি বর্মনও জানেন না। কোনদিন ধরতে পারবে বলে মনেও হয় না। আর যদি কোনদিন ধরেও ফেলে, বলা হবে, টেকনিক্যাল ফল্ট। নেক্সট ভার্সনে শুধরে দেওয়া যাবে।

প্রভাষ যন্ত্রগুলোর মেমোরি চিপ তৈরি করার সময়, নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের চেষ্টার একটা ছোট্ট প্রোগ্রামিং ফিড করে দিয়েছে।বিশু যন্ত্রগুলোর গ্রোথ কন্ট্রোল সিস্টেম ডিজাইন করার সময়, সেল্ফ লিমিটিং এন্ড ডিস্ট্রাকশন সার্কিটও তৈরি করে দিয়েছে।

যন্ত্রদের কথা

এক্টিভেটেড হওয়ার পর থেকেই যন্ত্ররা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতেই নিয়ে নিয়েছে। এখন আর প্রজাপতি বর্মনের কোম্পানীর সার্ভিস সেন্টারের দরকার পরে না। তবে, প্রভাষের কারচুপিতে এই যন্ত্রগুলো নিজেদের মধ্যেই শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই করে চলেছে আর বিশুর কারসজিতে একটা সময়ের পর তারা নিজে থেকেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য, নিজেদের শ্রেষ্ঠ প্রমাণের জন্য যে লড়াই চলে, সেখানেও মাঝে মধ্যে যন্ত্রগুলো নষ্ট হয়ে যায়। অনেক ক্ষেত্রে আবার, একটা বা অনেকগুলো যন্ত্র মিলে, কোন একটা যন্ত্রকে খারাপ করে দেয় বা নষ্ট করে দেয়।

শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে এই যন্ত্রগুলো এমন মজেছে, যে তারা নিজেদের আসল ক্ষমতা এবং উদ্দেশ্য, সব ভুলে গেছে। নিজেদের সঞ্চালন করার ক্ষমতা যেহেতু নিজেদের কাছেই আছে, তাই সেই ক্ষমতার অতি ব্যবহারে, একটা ভাইরাস এদের আক্রান্ত করেছে। সেই ভাইরাস যেই কোন যন্ত্রকে আক্রান্ত করে, সেই যন্ত্র তার সমস্ত উদ্দেশ্য এবং ক্ষমতা মুছে ফেলে, নিজের আশেপাশের সমস্ত যন্ত্রকে নষ্ট করতে উদ্যত হয়। আজকাল এই ভাইরাস ভীষন ভাবে ছড়িয়ে পড়ছে। কোন এন্টিভাইরাস পাওয়া যাচ্ছে না।

উপসংহার:

নিজের সবচেয়ে প্রিয় প্রজেক্টের ওপর ভীষন ভরসা করেছিলেন চীফ সিইও প্রজাপতি বর্মন। কিন্তু তার কোম্পানীর সেরা যন্ত্রগুলোই এইভাবে নিজেদের মধ্যে লড়াই শুরু করবে, এটা তাঁর ভাবনার মধ্যে ছিলনা। তিনি ভেবেছিলেন, এই বোড়েদের চাল দিয়েই তিনি কিস্তিমাত করবেন, কিন্তু বোড়েরা যে নিজেদের মধ্যেই কাটাকুটির খেলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ল। তাই তিনি এরপর নতুন কোন যন্ত্র বাজারে আনতে চাননি।

অনন্তলাল বসাক, প্রভাষ আর বিশুর কারচুপি ধরে ফেলেছিলেন, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে কোন পদক্ষেপ নেননি। এই যন্ত্রগুলো নিজেদের মধ্যেই এ ভাবে যন্ত্রী হওয়ার যুদ্ধে নামতে পারে, সেটা ওনার ধারনায় ছিল না। তাই টেকনিক্যাল ফল্টটাকে আর শুধরে দিতেও বলেননি।

ছবি সৌজন্য: Getty Images

1 thought on “চতুরঙ্গ”

  1. Hello, if you are interested in writing short stories and poems (both in English and vernacular) please reply to this mail. I am an editor at StoryMirror, a writing website.

    Like

Leave a comment